ধনে পাতার স্বাদ ও গন্ধের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন না এমন ব্যক্তি কিন্তু খুব কম-ই আছে। প্রায় সব ধরনের তরকারিতেই ধনে পাতা স্বাদ বৃদ্ধি করে থাকে; সেই সাথে যুক্ত করে অসাধারণ ঘ্রাণ। ধনে পাতা কি শুধু স্বাদে গন্ধেই অনন্য? খাদ্য ও পুষ্টিগুণ বিচারে ধনে পাতার উপকারিতা বর্ণনাতীত।
ধনে পাতার উপকারিতা:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, ধনে পাতা কেবল সৌন্দর্য আর স্বাদ বাড়াতেই অনন্য নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারী। ধনে পাতা রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে:
শরীরের জন্য ক্ষতিকর খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।
পাকস্থলির সমস্যায় ধনে পাতা:
ধনে পাতা পেট ফাঁপা ও পাকস্থলির বিভিন্ন সমস্যা দূর করে হজমশক্তি বাড়ায়।
হাড় মজবুত করে:
এটি হাড়কে মজবুত করে বাত রোগ নিরাময় করে।
মেয়েদের মাসিকেও কার্যকর:
মেয়েদের মাসিকে অতিরিক্ত ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণেও ধনে পাতা কাজে আসে। এজন্য পাঁচশ মিলিলিটার পানিতে ছয় গ্রাম ধনে পাতা ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ওই গরম পানিতে এক টেবিল চামচ চিনি ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে হবে।
বাতের ব্যথা উপসম:
ধনে পাতা সিদ্ধ পানি খেলে বাতের ব্যথা সেরে যায়।
রূপচর্চায় ধনে পাতা:
রূপচর্চায়ও দারুন কাজ দেয়। ধনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ , ভিটামিন সি, ফসফরাস ও ক্লোরিন। তাই প্রাকিতিক ব্লিচ হিসেবে ধনে পাতা দারুন কার্যকর। যাদের ঠোঁটে কালো দাগ আছে তারা রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ধনে পাতার রসের সাথে দুধের সর মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। এইভাবে এক মাস লাগালে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে আর ঠোঁট কোমলও হবে।
এছাড়া ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।ধনে পাতায় রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ফাইবার, আয়রন, ফ্লেভোনয়েড, ম্যাগনেশিয়ামসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
ধনে পাতার কিছু অপকারিতা:
নিম্ন রক্তচাপ
অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে দেহের হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য নষ্ট করে ফেলে, যার ফলে নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে নিম্ন রক্তচাপের উদ্ভব ঘটতে পারে। এছাড়া এটি হালকা মাথাব্যথারও উদ্রেক করতে পারে।
বুকে ব্যথা
অতিরিক্ত ধনেপাতা আহারে বুকে ব্যথার মত জটিল সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এটা শুধুমাত্র অস্বস্তিকর ব্যথাই সৃষ্টি করে না তা দীর্ঘস্থায়ীও হয়ে থাকে। এজন্য এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে দৈনন্দিন আহারে কম করে এই ধনেপাতা খেতে পারেন।
লিভারের ক্ষতিসাধন
অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে এটি লিভারের কার্যক্ষমতাকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এতে থাকা এক ধরনের উদ্ভিজ তেল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে ফেলে। এছাড়া এটাতে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যেটা সাধারণত লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে কিন্তু দেহের মাঝে এর অতিরিক্ত মাত্রার উপস্থিতি লিভারের ক্ষতিসাধন করে।
পেট খারাপ
স্বাভাবিকভাবে ধনেপাতা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বিষয়ক সমস্যা দূর করে থাকে কিন্তু বেশি পরিমাণে ধনেপাতা সেবন পাকস্থলীতে হজমক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এক সপ্তাহে ২০০ এমএল ধনেপাতা আহারে গ্যাসের ব্যথা ওঠা, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে ওঠা, বমি হওয়া হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা যায়।
ডায়রিয়া
ধনেপাতা অল্প খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় কিন্তু এটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়া এর ফলে ডিহাইড্রেশন হতে থাকে। ফলে ডায়রিয়ার সমস্যাটি হতেই থাকে। তাই এই ধরনের সমস্যা এড়াতে প্রতিদিনের খাবারে ধনেপাতা কম পরিমাণে ব্যবহার করুন।
নিঃশ্বাসের সমস্যা
আপনি যদি শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে এই ধনেপাতা আহার থেকে বিরত থাকুন। কেননা এটি আপনার শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা করে থাকে যার ফলে ফুসফুসে অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে। এই ধনেপাতা খেলে মাঝে মাঝে ছোট ছোট নিশ্বাস নিতেও সমস্যা তৈরি হয়।
ত্বকের সংবেদনশীলতা
সবুজ ধনেপাতাতে মোটামুটিভাবে কিছু ঔষধি অ্যাসিডিক উপাদান থাকে যেটি ত্বককে সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচিয়ে সংবেদনশীল করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে সূর্যের রশ্মি একেবারেই ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না ফলে ত্বক ভিটামিন কে থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া ধনেপাতা ত্বকের ক্যান্সার প্রবণতাও তৈরি করে থাকে।
অ্যালার্জীর সমস্যা
ধনেপাতার প্রোটিন উপাদানটি শরীরে আইজিই নামক অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানকে সমানভাবে বহন করে থাকে। কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা উপাদানগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। ফলে অ্যালার্জীর তৈরি হয়। এই অ্যালার্জীর ফলে দেহে চুলকানি, ফুলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া করা, র্যা শ ওঠা এই ধরনের নানা সমস্যা হয়ে থাকে।
প্রদাহ
অতিরিক্ত ধনেপাতা সেবনের আরেকটি বিশেষ পার্শ্ব প্রতক্রিয়া হল মুখে প্রদাহ হওয়া। এই ঔষধিটির বিভিন্ন এসিডিক উপাদান যেটি আমাদের ত্বককে সংবেদনশীল করে থাকে পাশাপাশি এটি মুখে প্রদাহেরও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে এর ফলে ঠোঁট, মাড়ি এবং গলা ব্যথা হয়ে থাকে। এর ফলে সারা মুখ লাল হয়েও যায়।
ভ্রূণের ক্ষতি
গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। ধনেপাতাতে থাকা কিছু উপাদান মহিলাদের প্রজনন গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলে যার ফলে মহিলাদের বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা লোপ পায় এবং বাচ্চা ধারণ করলেও গর্ভকালীন ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।
বস্, ধনে পাতা নিয়মিত খেলে কি সিক্স প্যাক বানানো সম্ভব।
ReplyDeleteতাহলে আমি আজ থেকে খাওয়া শুরু করব।
সত্যি কি ধনে পাতার উপকার আছে "?নাকি এটাতে ক্ষতি ""?
ReplyDeleteপরিমান মত সবই ভাল, অতিরিক্ত কিছুই ভাল না।
Deleteসত্যি কি ধনে পাতার উপকার আছে "?নাকি এটাতে ক্ষতি ""?
ReplyDelete