গোলাপ জলে ত্বকের যন্ত ও মনের প্রশান্তি
আজকের সময়ের
নারী-পুরুষরা তাদের
সৌন্দর্য নিয়ে
অনেক
সচেতন।তারা সুন্দর
এবং
দীপ্তিময় ত্বক
পাওয়ার
জন্য
বিউটি
সেলুনে বা পার্লারে হাজার
হাজার
টাকা
খরচ
করতে
পিছপা
হন
না।কিন্তু একটি
কথা
না
বললেই
নয়
যে,
এই
কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের উপকারিতা স্বল্পমেয়াদী এবং
অনেক
ক্ষেত্রে তা
ক্ষতিকারকও প্রকৃতির দান গোলাপজল দিয়ে
আমাদের
সর্বাঙ্গীণ সৌন্দর্যের চর্চা
করতে
পারি।গোলাপ জল
ত্বকের
প্রশান্তি এনে
দিতে
পারে।
সারা
দিনের
কর্মব্যস্ত শরীরকে
ফুরফুরে করে
তুলতে
পারে।
যুগ
যুগ
ধরে
ত্বকের
যত্নে
গোলাপ
জলের
ব্যবহারের কথা
জানা
যায়।গোলাপ জল
হচ্ছে
প্রাচীনতম রূপচর্চার উপাদান।কোমল ত্বকের
জন্য
এটি
গোসলের
পানির
সঙ্গেও
ব্যবহৃত হয়।গোলাপ জল
কীভাবে
আপনার
ওপর
বিষ্ময়করভাবে কাজ
করে।
গোলাপের সুবাস
আপনার
মনকে
শান্তিময় করে
দিতে
পারে।
এটি
আপনার
অনুভূতি এবং
মনজগতের ওপর
ভালো
প্রভাব
ফেলে।
আধুনিক
মানুষের কাছে গোলাপ বনজ সৌন্দর্যের প্রতীক। Rosaceae পরিবারের Rosa গোত্রের এক প্রকারের গুল্ম জাতীয় গাছে গোলাপ ফুল ফুটে থাকে। প্রায় ১০০
প্রজাতির বিভিন্ন বর্ণের গোলাপ তার পাঁপড়ির গড়ন ও বিন্যাস দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করেছে যুগ যুগ ধরে। আর সাথে
চির আকর্ষণীয় সুগন্ধ তো আছেই।
গোলাপের আদি নিবাস এশিয়া
মহাদেশে। ইরাকি-তুর্কি মাতৃভূমি
থেকে হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে জয়যাত্রা
শুরু করে জলে-স্থলে
বাণিজ্যপথ ধরে গোলাপ পৌঁছে
যায় ক্রিটে, গ্রিসে, আফ্রিকার উত্তর আর মিসরেও।
হাজার বছর ধরে অলখে
লুকিয়ে থাকার পরে অবশেষে
গোলাপের দেখা মেলে খ্রিষ্টপূর্ব
ষোলো শতকের ক্রিটের দেয়ালচিত্রে
আর মৃৎপাত্রের গায়ে আঁকা ছবিতে।
খ্রিষ্টের সাতশ বছর আগের
মহাকাব্য ইলিয়াড-ওডিসির দুটিতেই গোলাপের
উল্লেখ রয়েছে। হোমারের বর্ণনায় অ্যাকিলিসের ঢাল ছিল গোলাপখচিত,
নিহত হেক্টরের দেহে আফ্রোদিতি লেপন
করেছিলেন গোলাপের মলম। প্রেমের অধিষ্ঠাত্রী
গ্রিক দেবী আফ্রোদিতি এবং
রোমান দেবী ভিনাস-উভয়ের
প্রতি উৎসর্গিত ফুলটি ছিল বিকল্পহীন
গোলাপ। হোমারের গোলাপগুলো ছিল অবশ্য সাদামাটা
প্রাকৃতিক গোলাপ। তবে খ্রিষ্টপূর্ব
ষষ্ঠ শতকে গ্রিসের লেসবসবাসিনী
গীতিকবি সাফোর (খ্রিষ্টপূর্ব ৬১০-৫৮০) বন্দনাতেই ফুলের
রানিরূপে প্রথম অধিষ্ঠান হয়
গোলাপের। সেই থেকে, বিগত
২৭০০ বছরের ইতিহাসে গোলাপই
একমাত্র রাজন্য যিনি তাঁর
রাজমুকুটখানি হারাননি-বরং মানুশের মনে
তার সাম্রাজ্য বিস্তার করেই চলেছে।গোলাপ ফুলের নির্যাস ব্যবহারে ত্বকে ও স্বাস্থ্যের অনেক উপকারিতা লুকিয়ে আছে। বিশেষ করে প্রসাধনী হিসেবে গোলাপজলের ব্যবহার ভীষণ উপকারী। গোলাপজল আপনার ত্বককে প্রাকৃতিক ভাবে পরিষ্কার করে, এর উজ্জ্বলতা বাড়ায়,আবার আপনার খারাপ মেজাজকে নিমিশেই ফুরফুরে করে তুলতেও এটা অতুলীয়।
নিজেই বানিয়ে নিন তাজা গোলাপের নির্যাস থেকে গোলাপজল-
কিভাবে বানাবেন-
4০০ মিলি বিশুদ্ধ পানিতে 2 টেবিল চামচ গোলাপের
এসেনশিয়াল তেল দিন। ব্যস
প্রস্তুত আপনার গোলাপজল।আরও উপায় আছে। রাত ভর গোলাপের পাপড়ি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। হতে পারে আপনার গোসলের বাথটাবে, কিংবা সংগ্রহ করে রাখাবার মত কোন পাত্রে। আর সব চাইতে ভাল হয় যদি সকালের তাজা ফুলের পাপড়িগুলো থেকে ভোরের শিশির সংগ্রহ করতে পারেন, একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে।
সৌন্দর্য রক্ষায় ও ত্বকের যন্তে গোলাপজলঃ-
·
গোলাপজল
ত্বকের অতিরিক্ত তেল, ময়লা ও
অন্যান্য ময়লা মুছে ফেলে
আপনার ত্বককে ঠাণ্ডা রাখে। এছাড়াও
আপনি আপনার ফেসপ্যাকটি গোলাপজল
দিয়ে তৈরি করুন।
এতে ত্বকের গাঢ় দাগ
দূর হবে সহজেই ।গোলাপ জল দিয়ে
আপনার মুখ ধুলে তা
টোনার হয় হিসেবেও কাজ
করে।
·
গোলাপ
জল এর ফেসপ্যাক বানাতে
দুই টেবিল চামচ চন্দন
কাঠের পাউডার ,আধা টেবিল চামচ
গোলাপ জল এবং আধা
টেবিল চামচ লেবু রস
দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে
এই প্যাক লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা
করুন। শুকিয়ে
গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন।
·
ত্বকের
আদ্রর্তা বজায় রাখতে গোলাপজল
এবং গ্লিসারিন একসাথে মিশিয়ে নিয়ে
ব্যবহার করুন। সারা
বছরই এটা আপনাকে দেবে
দারুন কোমল ত্বক।
·
ত্বকের
লাল
ফুসফুঁড়ি থেকে
মুক্তি
পাবার
জন্য
তরমুজের রস,
চন্দন
বাটা,
ময়দা
ও
গোলাপজলের মিশ্রণ
লাগিয়ে
নিন।
অল্প
শুকিয়ে
গেলে
ধুয়ে
নিন।
·
নিয়মিত গোলাপজল
ব্যবহার করলে
চোখের নিচের
কালো দাগ
দূর হয়,
ক্লান্তির ছাপ
পড়ে না,
একই সঙ্গে
থাকে ভালো
চোখ।চোখ লাল
কিংবা জ্বালাপোড়া
করলে কটনবার
কিংবা তুলার
মধ্যে গোলাপজল
নিয়ে চোখে
লাগিয়ে কয়েক
মিনিট চোখ
বন্ধ করে
রাখলে তাৎক্ষনিক
আরাম পাওয়া
যায়। এছাড়া
প্রতিদিন রাতে
চোখে গোলাপজল
লাগিয়ে ঘুমালে
চোখের ছোয়াচে
রোগ হতে
রক্ষা পাওয়া
সম্ভব।
নিয়মিত গোলাপজল ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়।
চন্দনের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে চোখের পাতা ও তার চারপাশে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে চোখের নিচের ক্লান্তি ছাপ দূর হবে।
নিয়মিত গোলাপজল ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়।
চন্দনের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে চোখের পাতা ও তার চারপাশে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে চোখের নিচের ক্লান্তি ছাপ দূর হবে।
·
ক্লিঞ্জার
হিসেবে ব্যবহার করতে সমান পরিমাণ
মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে
নিন। দিনে
একবার তুলায় লাগিয়ে মুখে
ও গলায় লাগিয়ে নিন। ২০
মিনিট পর মুখ ধুয়ে
নিন।
·
যাদের
ত্বক
তৈলাক্ত ও
ব্রণ
আছে,
তারা
প্যাক
ধুয়ে
ফেলে
ময়েশ্চারাইজারের বদলে
ব্যবহার করুন
অ্যাসট্রিনজেন্ট। ঘরোয়া
অ্যাসট্রিনজেন্ট হলো
গোলাপজল ও
শসার
রস।
এগুলো
ফ্রিজে
রেখে
ঠাণ্ডা
করে
নিলে
আরও
ভালো।
গোলাপজল বরফ
জমানোর
পাত্রে
রেখে
আইস-কিউব করে নিতে
পারেন।
প্রতি
রাতে
রস
একটি
কিউব
মুখে
ঘষে
নিন।
·
স্ক্রাব
হিসেবে ব্যবহার করতে কাঠবাদামের পেস্টের
সাথে গোলাপজল মিশিয়ে নিন। হাল্কা
ম্যসাজ করে মুখে ঘষুন। পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এটি আপনার ত্বকের ছিদ্র
খুলে ভেতরের ময়লা বের
করে আনবে।
·
বয়সের
ছাপ দূর করতে দুই
টেবিল চামচ চন্দন কাঠের
গুঁড়া, আধা টেবিল চামচ
গোলাপ জল এবং আধা
টেবিল চামচ গ্লিসারিন মেলান। প্রতিদিন
২০ মিনিটের জন্য মুখে এই
পেস্ট লাগান। গ্লিসারিনের
বদলে মধু ও দিতে
পারেন।
·
ব্ল্যাকহেডস প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ
করে
গোলাপজল। শসা,
তুলসী,
গোলাপজল ও
নিম
পাতার
মিশ্রণ
ব্যবহার করলে
ব্ল্যাক হেডসের
যন্ত্রণা থেকে
মুক্তি
পাবেন।
·
ব্রণ
হাত
থেকে
মুক্তি
পাবার
কার্যকরী একটি
উপদান
হলো
গোলাপজল। তৈলাক্ত ত্বকে
ধুলো,
ময়লা,
বালি,
মটি
ইত্যাদি জমে
ব্রণ তৈরি করে।
এসব
অনাকাংখিত যন্ত্রণা থেকে
মুক্তি
পাওয়ার
জন্য
অর্ধেক
আপেল,
দু’টেবিল চামচ বার্লি,
ডিমের
সাদা
অংশ,
এক
লিটার
গোলাপজল নিন।
আপেল
ও
বার্লি
গোলাপ
পানিতে
অল্প
আঁচে
সেদ্ধ
করুন।
ঘন
হলে
ডিমের
সাদা
অংশ
দিয়ে
নাড়তে
থাকুন
যতোক্ষণ না
মসৃণ
হয়ে
যায়।
এবার
ফ্রিজে
রেখে
ঠাণ্ডা
করে
নিন।
ঠাণ্ডা
হলে
ব্রণের
উপর
লাগিয়ে
নিন।
·
ত্বকের যত্নে
নিয়মিত
গোলাপজল ব্যবহার করলে
ত্বকে
ক্লান্তির ছাপ
একেবারেই পড়ে
না।
আলট্রা
ভায়োলেট রশ্মির
কারণে
ত্বকে
হারিয়ে
যাওয়া
আর্দ্রতার যোগান
দিতে
গোলাপজলের বিকল্প
নেই।এক্ষেত্রে ময়দা
ও
পাকা
আমের
তৈরী
মিশ্রণে গোলাপজল মিশিয়ে
মিশ্রণটি মুখে
মিনিট
পনেরো
রেখে
ধুয়ে
ফেলুন।
দেখবেন
রোদ্রে
পোড়া
ত্বক
ফিরে
পেয়েছে
তার
হারানো
পেলবতা
ও
উজ্জ্বলতা। প্রচণ্ড গরমের
কারণে
মুখে
ক্লান্তির ছাপ
পড়ে।
গরম
আবহাওয়ার মেজাজের সঙ্গে
মোকাবেলা করে
গোলাপজল দেয়
তরতাজা
আমেজ।
ডাবের
পানি,
সামান্য গোলাপজল ও
বরফ
পানির
সঙ্গে
মিশিয়ে
মুখে
লাগিয়ে
দেখুন,
মুছে
যাবে
ক্লান্তির ছাপ। ১০থেকে
১৫টি
তুলসী
পাতার
সাথে
২০০
মিলি
গোলাপ
জল
যোগ
করুন।
একটি
স্প্রে
বোতলে
এই
তরল
সঞ্চয়
করে
ফ্রিজে
রাখুন। একটি দীর্ঘ ক্লান্ত দিন
শেষে
এটি
স্প্রে
করুন
পুরো
শরীরে।দেখবেন শরীর
অনেক
ঠাণ্ডা
হবে।এই
তরল
রোদে
পোড়ার
প্রভাব
রোধ
করে
এবং
ত্বকে
লাল
ফুসকুড়ি থাকলে
তা
নিরাময় সহায়তা।
শুধু
রুপ আর সুগন্ধে নয়,
গোলাপ মাতিয়ে রাখতে পারে আপনার
ত্বকের স্বাস্থ্য আর সৌন্দর্য খুব
সহজে, ঘরে বসেই। রূপচর্চায় প্রচলিত প্রসাধনী সামগ্রীর রাসায়নিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ত্বকের,চুলের নানা ধরনের
ক্ষতি
হয়।
যে
কারণে
আজকাল
প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে অনেকেই
দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন।এক্ষেত্রে
রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদান
সমৃদ্ধ
গোলাপজলকে অনেকে
খুব
সহজেই
নিয়মিতভাবে ব্যবহারের জন্য
বেছে
নিতে
পারেন।
No comments:
Post a Comment